ম্যাট্রিক্স (Matrix)
ম্যাট্রিক্স হলো সংখ্যা, প্রতীক, অথবা অভিব্যক্তির আয়তাকার বিন্যাস। একাধিক সারি (row) এবং কলাম (column) নিয়ে গঠিত একক সংগ্রহই হচ্ছে ম্যাট্রিক্স। এটি লিনিয়ার অ্যালজেব্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ম্যাট্রিক্স সাধারণত m×n আকারে উপস্থাপিত হয়, যেখানে m নির্দেশ করে সারির সংখ্যা এবং n নির্দেশ করে কলামের সংখ্যা। ম্যাট্রিক্সের প্রত্যেকটি উপাদান নির্দিষ্ট স্থানে থাকে এবং এটি একটি নির্দিষ্ট মান প্রকাশ করে।
ম্যাট্রিক্স বিভিন্ন গাণিতিক, প্রকৌশল, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যেমন ইমেজ প্রসেসিং, ডেটা বিশ্লেষণ, 3D গ্রাফিক্স এবং মেশিন লার্নিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এটি লিনিয়ার সমীকরণ সমাধানে এবং ভেক্টর ও স্পেস ট্রান্সফরমেশনে সহায়ক।
নির্ণায়ক (Determinant)
নির্ণায়ক হলো ম্যাট্রিক্সের একটি স্কেলার মান যা ম্যাট্রিক্সের গুণফল এবং তার বিপরীত (inverse) থাকলে সেটি সনাক্ত করতে সাহায্য করে। এটি শুধুমাত্র বর্গাকার ম্যাট্রিক্সের জন্য সংজ্ঞায়িত এবং |A| বা det(A) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। নির্ণায়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ কারণ এটি বলে দেয় যে একটি ম্যাট্রিক্স রৈখিক স্বাধীন (linearly independent) কিনা এবং সেটির বিপরীত (inverse) আছে কিনা।
ধরা যাক একটি 2×2 ম্যাট্রিক্স A=[abcd], তাহলে এর নির্ণায়ক:
|A|=ad−bc
|A|=a(ei−fh)−b(di−fg)+c(dh−eg)
সারসংক্ষেপ
ম্যাট্রিক্স ও নির্ণায়ক গাণিতিক বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ম্যাট্রিক্সের ব্যবহার বিভিন্ন গণিত ও প্রকৌশল ক্ষেত্রে সমাধান প্রক্রিয়া সহজতর করে, আর নির্ণায়ক আমাদের ম্যাট্রিক্সের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বুঝতে সাহায্য করে, যা সমীকরণ সমাধান এবং অন্যান্য গাণিতিক প্রয়োগে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ম্যাট্রিক্স বা ত্রৈমাত্রিক বীজগণিতের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যা সাধারণত ম্যাট্রিক্সের আকার, উপাদানের বৈশিষ্ট্য এবং কার্যকারিতা অনুসারে ভিন্ন হয়। নিচে ম্যাট্রিক্সের কিছু প্রধান প্রকারের বর্ণনা দেওয়া হলো:
১. শূন্য ম্যাট্রিক্স (Zero Matrix):
যে ম্যাট্রিক্সের সমস্ত উপাদান শূন্য থাকে তাকে শূন্য ম্যাট্রিক্স বলে। এটি O দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
২. একক ম্যাট্রিক্স (Identity Matrix):
যে স্কোয়ার ম্যাট্রিক্সের প্রধান কর্ণে সবগুলাে উপাদান 1 এবং বাকি সব উপাদান 0 থাকে, তাকে একক ম্যাট্রিক্স বলে। এটি I দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
৩. ডায়াগোনাল ম্যাট্রিক্স (Diagonal Matrix):
যে স্কোয়ার ম্যাট্রিক্সের প্রধান কর্ণ ছাড়া অন্যান্য সব উপাদান শূন্য থাকে, তাকে ডায়াগোনাল ম্যাট্রিক্স বলে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র প্রধান কর্ণে মান থাকবে।
৪. উপ-ত্ৰিভুজাকৃতি ম্যাট্রিক্স (Triangular Matrix):
যে স্কোয়ার ম্যাট্রিক্সের উপরের বা নিচের ত্রিভুজ আকারে উপাদান থাকে এবং বাকি উপাদানগুলো শূন্য থাকে, তাকে ত্রিভুজাকৃতি ম্যাট্রিক্স বলা হয়। এটি দুই প্রকার হতে পারে:
৫. স্কেলার ম্যাট্রিক্স (Scalar Matrix):
যে ডায়াগোনাল ম্যাট্রিক্সের প্রধান কর্ণে সমান মান থাকে এবং অন্য সব উপাদান শূন্য থাকে, তাকে স্কেলার ম্যাট্রিক্স বলে।
৬. শিম্যাট্রিক ম্যাট্রিক্স (Symmetric Matrix):
যে ম্যাট্রিক্সের উপাদান aij=aji হয়, তাকে শিম্যাট্রিক ম্যাট্রিক্স বলা হয়। অর্থাৎ, ম্যাট্রিক্সটি প্রধান কর্ণের দুই পাশে আয়নাকারভাবে সমান থাকে।
৭. এন্টি-সিম্যাট্রিক ম্যাট্রিক্স (Anti-Symmetric Matrix):
যে ম্যাট্রিক্সের উপাদান aij=−aji হয় এবং প্রধান কর্ণের উপাদান শূন্য থাকে, তাকে এন্টি-সিম্যাট্রিক ম্যাট্রিক্স বলে।
৮. একক সারি বা কলামের ম্যাট্রিক্স (Row Matrix / Column Matrix):
৯. ক্রান্তিকাল ম্যাট্রিক্স (Transposed Matrix):
যদি কোনো ম্যাট্রিক্সের সারি ও কলাম স্থানান্তরিত করে তৈরি করা হয়, তবে সেটিকে ক্রান্তিকাল ম্যাট্রিক্স বলে। A ম্যাট্রিক্সের ক্রান্তিকাল ম্যাট্রিক্স AT দ্বারা প্রকাশিত হয়।
এগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের ম্যাট্রিক্স রয়েছে, যেমন ব্লক ম্যাট্রিক্স, ইডেম্পোটেন্ট ম্যাট্রিক্স, অরথোগোনাল ম্যাট্রিক্স ইত্যাদি।
ম্যাট্রিক্স অ্যালজেব্রার মধ্যে সমতা, যোগ, বিয়োগ ও গুণের বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। নিচে প্রতিটি নিয়মের ব্যাখ্যা দেয়া হলো:
ম্যাট্রিক্সের সমতা (Equality of Matrices):
দুটি ম্যাট্রিক্স A এবং B সমান হবে যদি:
যদি এই দুই শর্ত পূর্ণ হয়, তবে A=B।
ম্যাট্রিক্সের যোগ (Addition of Matrices):
যদি দুটি ম্যাট্রিক্সের আকার (রো এবং কলাম সংখ্যা) একই হয়, তবে তাদের যোগ করা সম্ভব। A এবং B দুটি ম্যাট্রিক্স হলে তাদের যোগকে A+B হিসেবে প্রকাশ করা হয়। এটি নিচের নিয়ম অনুসারে হয়:
\[
(A + B){ij} = a{ij} + b_{ij}
\]
উদাহরণস্বরূপ, যদি
A=(1234)এবংB=(5678)
তাহলে,
A+B=(1+52+63+74+8)=(681012)
ম্যাট্রিক্সের বিয়োগ (Subtraction of Matrices):
যদি দুটি ম্যাট্রিক্সের আকার একই হয়, তবে তাদের বিয়োগ করা সম্ভব। A এবং B দুটি ম্যাট্রিক্স হলে তাদের বিয়োগকে A−B হিসেবে প্রকাশ করা হয়। এটি নিচের নিয়ম অনুসারে হয়:
\[
(A - B){ij} = a{ij} - b_{ij}
\]
উদাহরণস্বরূপ, যদি
A=(5678)এবংB=(1234)
তাহলে,
A−B=(5−16−27−38−4)=(4444)
ম্যাট্রিক্সের গুণ (Multiplication of Matrices):
ম্যাট্রিক্সের গুণ দুই ধরনের হতে পারে: স্কেলার গুণ এবং ম্যাট্রিক্স গুণ।
১. স্কেলার গুণ (Scalar Multiplication):
কোনো ম্যাট্রিক্সের প্রতিটি উপাদানকে একটি নির্দিষ্ট স্কেলার সংখ্যার সাথে গুণ করা হয়। যদি k একটি স্কেলার সংখ্যা এবং A একটি ম্যাট্রিক্স হয়, তবে kA এর উপাদানগুলো হবে k⋅aij।
উদাহরণস্বরূপ, যদি
A=(1234)এবংk=3
তাহলে,
kA=3×(1234)=(36912)
২. ম্যাট্রিক্স গুণ (Matrix Multiplication):
দুটি ম্যাট্রিক্স A এবং B গুণ করতে হলে A-এর কলামের সংখ্যা এবং B-এর সারির সংখ্যা সমান হতে হবে। যদি A একটি m×n ম্যাট্রিক্স এবং B একটি n×p ম্যাট্রিক্স হয়, তবে তাদের গুণফল AB একটি m×p ম্যাট্রিক্স হবে।
প্রতিটি উপাদান cij নির্ণয় করার নিয়ম হলো:
cij=n∑k=1aik⋅bkj
উদাহরণস্বরূপ, যদি
A=(1234)এবংB=(2013)
তাহলে,
AB=((1⋅2+2⋅1)(1⋅0+2⋅3)(3⋅2+4⋅1)(3⋅0+4⋅3))=(461012)
এগুলোই ম্যাট্রিক্সের সমতা, যোগ, বিয়োগ এবং গুণের প্রধান নিয়ম।
ম্যাট্রিক্স সরলীকরণের জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত তিন ধরনের রো অপারেশন ব্যবহার করা হয়:
নির্ণায়ক (Determinant) হলো একটি স্কোয়ার ম্যাট্রিক্সের একটি বিশেষ গাণিতিক মান, যা ম্যাট্রিক্সের উপাদানগুলোর উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়। নির্ণায়ক অনেক গাণিতিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন সিস্টেম অফ ইকুয়েশন সমাধান, ম্যাট্রিক্সের বিপরীত নির্ণয় এবং স্থানাঙ্ক নির্ধারণে।
নিচে নির্ণায়ক সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণনা করা হলো:
নির্ণায়ককে সাধারণত |A| বা \det(A) দ্বারা প্রকাশ করা হয়, যেখানে A একটি স্কোয়ার ম্যাট্রিক্স। নির্ণায়কের মান ম্যাট্রিক্সের আকারের উপর নির্ভরশীল এবং এটি একটি একক সংখ্যা।
একটি 2 \times 2 ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক খুব সহজে বের করা যায়। যদি
A = \begin{pmatrix} a & b \\ c & d \end{pmatrix}
তাহলে নির্ণায়ক |A| হবে:
|A| = ad - bc
উদাহরণস্বরূপ, যদি
A = \begin{pmatrix} 3 & 8 \\ 4 & 6 \end{pmatrix}
তাহলে,
|A| = (3 \times 6) - (8 \times 4) = 18 - 32 = -14
একটি 3 \times 3 ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক নির্ণয় করতে আরও কিছু বেশি হিসাব প্রয়োজন। যদি
A = \begin{pmatrix} a & b & c \\ d & e & f \\ g & h & i \end{pmatrix}
তাহলে নির্ণায়ক |A| হবে:
|A| = a(ei - fh) - b(di - fg) + c(dh - eg)
উদাহরণস্বরূপ, যদি
A = \begin{pmatrix} 1 & 2 & 3 \\ 0 & 4 & 5 \\ 1 & 0 & 6 \end{pmatrix}
তাহলে,
|A| = 1(4 \times 6 - 5 \times 0) - 2(0 \times 6 - 5 \times 1) + 3(0 \times 0 - 4 \times 1)
= 1 \times 24 - 2 \times -5 + 3 \times -4 = 24 + 10 - 12 = 22
নির্ণায়কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো:
নির্ণায়ক বিভিন্ন গাণিতিক ও প্রকৌশল সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়:
এই ছিল নির্ণায়ক সম্পর্কে একটি সারাংশ, যা ম্যাট্রিক্স অ্যালজেব্রা ও গণিতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে সহায়ক।
নির্ণায়কের (Determinant) ধর্মাবলী বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যার সমাধান সহজ করতে সহায়ক। ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মাবলী নিচে বর্ণনা করা হলো:
১. ইউনিট ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক:
একটি ইউনিট ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক সবসময় 1 হয়। যেমন, I_n যদি n \times n অর্ডারের একটি ইউনিট ম্যাট্রিক্স হয়, তবে |I_n| = 1।
২. দুটি সারি বা কলাম অভিন্ন হলে নির্ণায়ক শূন্য:
যদি কোনো স্কোয়ার ম্যাট্রিক্সের দুটি সারি বা দুটি কলাম একই হয়, তাহলে ওই ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক শূন্য হবে। অর্থাৎ, ম্যাট্রিক্সটি সিংগুলার।
৩. সারি বা কলাম বিনিময়ের ফলে নির্ণায়কের চিহ্ন পরিবর্তন:
কোনো ম্যাট্রিক্সের দুটি সারি বা কলাম বিনিময় করলে নির্ণায়কের চিহ্ন পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ, ধনাত্মক নির্ণায়ক ঋণাত্মক এবং ঋণাত্মক নির্ণায়ক ধনাত্মক হয়ে যায়।
৪. সারি বা কলামের সব উপাদানকে একটি সংখ্যা দ্বারা গুণ করলে নির্ণায়কও ওই সংখ্যাটি দ্বারা গুণিত হয়:
যদি ম্যাট্রিক্সের একটি সারি বা কলামের সব উপাদানকে k দ্বারা গুণ করা হয়, তবে নির্ণায়কও k-গুণ বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, যদি A একটি n \times n ম্যাট্রিক্স হয় এবং কোনো এক সারিকে k দ্বারা গুণ করা হয়, তবে নতুন নির্ণায়ক হবে k \times |A|।
৫. নির্ণায়ক বিভাজনীয়:
যদি ম্যাট্রিক্সের একটি সারির প্রত্যেকটি উপাদানকে অন্য একটি সারির সংশ্লিষ্ট উপাদানের গুণফল যোগ করে গঠন করা হয়, তবে নির্ণায়ক অপরিবর্তিত থাকবে। এটি নির্দেশ করে যে, রো অপারেশনে যোগ বা বিয়োগ করা হলে নির্ণায়কের মান পরিবর্তিত হয় না।
৬. স্কোয়ার ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক শূন্য হলে তা সিংগুলার:
কোনো স্কোয়ার ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক শূন্য হলে সেটি সিংগুলার (Singular) ম্যাট্রিক্স হিসেবে বিবেচিত হয়, যার কোনো ইনভার্স (বিপরীত) ম্যাট্রিক্স নেই।
৭. নির্ণায়ক বহুগুণনের ধর্ম (Determinant of Product):
দুটি স্কোয়ার ম্যাট্রিক্স A এবং B-এর গুণফল AB হলে, তাদের নির্ণায়ক হবে |AB| = |A| \cdot |B|।
৮. ট্রায়াঙ্গুলার ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক:
যদি কোনো ম্যাট্রিক্স ত্রিভুজাকার হয় (উপরের বা নিচের ত্রিভুজ আকৃতি), তবে তার নির্ণায়ক হবে প্রধান কর্ণের উপাদানগুলোর গুণফল। অর্থাৎ, যদি A একটি ত্রিভুজাকার ম্যাট্রিক্স হয়, তবে |A| = a_{11} \times a_{22} \times ... \times a_{nn}।
৯. ম্যাট্রিক্সের ট্রান্সপোজের নির্ণায়ক:
কোনো ম্যাট্রিক্সের ট্রান্সপোজের নির্ণায়ক মূল ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়কের সমান হয়। অর্থাৎ, যদি A একটি n \times n ম্যাট্রিক্স হয়, তবে |A^T| = |A|।
১০. একাধিক সারি বা কলাম যদি নির্দিষ্ট সমানুপাতিক হয়, তবে নির্ণায়ক শূন্য:
যদি ম্যাট্রিক্সের দুটি সারি বা কলাম একে অপরের সমানুপাতিক হয়, তবে সেই ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক শূন্য হবে।
এই ধর্মগুলো নির্ণায়ক সম্পর্কিত গাণিতিক ক্রিয়াগুলো সহজ এবং সঠিকভাবে সম্পাদন করতে সহায়ক।
নির্ণায়কের ধর্মাবলী ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা যায়। নিচে কিছু সাধারণ সমস্যা এবং নির্ণায়কের ধর্মের প্রয়োগের মাধ্যমে সেগুলোর সমাধান প্রদর্শন করা হলো।
ধরা যাক, একটি 3 \times 3 ম্যাট্রিক্স A দেওয়া হয়েছে:
A = \begin{pmatrix} 1 & 2 & 3 \\ 4 & 5 & 6 \\ 7 & 8 & 9 \end{pmatrix}
A ম্যাট্রিক্সটি সিংগুলার কিনা তা নির্ণয় করতে হলে আমরা এর নির্ণায়ক বের করব।
|A| = 1 \times (5 \times 9 - 6 \times 8) - 2 \times (4 \times 9 - 6 \times 7) + 3 \times (4 \times 8 - 5 \times 7)
= 1 \times (45 - 48) - 2 \times (36 - 42) + 3 \times (32 - 35)
= 1 \times (-3) - 2 \times (-6) + 3 \times (-3)
= -3 + 12 - 9 = 0
যেহেতু |A| = 0, তাই A একটি সিংগুলার ম্যাট্রিক্স। অর্থাৎ, এর কোনো বিপরীত (Inverse) নেই।
ধরা যাক, A এবং B দুটি 2 \times 2 ম্যাট্রিক্স, যেখানে
A = \begin{pmatrix} 2 & 3 \\ 1 & 4 \end{pmatrix} \quad \text{এবং} \quad B = \begin{pmatrix} 0 & 1 \\ -1 & 2 \end{pmatrix}
আমরা জানতে চাই |AB| কত।
প্রথমে |A| এবং |B| নির্ণয় করি:
|A| = 2 \times 4 - 3 \times 1 = 8 - 3 = 5
|B| = 0 \times 2 - 1 \times (-1) = 0 + 1 = 1
এখন, নির্ণায়কের ধর্মাবলী অনুযায়ী, |AB| = |A| \times |B|, সুতরাং
|AB| = 5 \times 1 = 5
ধরা যাক, আমাদের নিচের দুটি সমীকরণ দেওয়া আছে:
2x + 3y = 5
4x + y = 11
এটি সমাধান করার জন্য আমরা ক্র্যামের নিয়ম ব্যবহার করতে পারি।
প্রথমে কফিশিয়েন্ট ম্যাট্রিক্সটি লিখি এবং এর নির্ণায়ক বের করি:
A = \begin{pmatrix} 2 & 3 \\ 4 & 1 \end{pmatrix}
|A| = 2 \times 1 - 3 \times 4 = 2 - 12 = -10
এখন, x এবং y-এর জন্য আলাদা ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক বের করি।
A_x = \begin{pmatrix} 5 & 3 \\ 11 & 1 \end{pmatrix}
|A_x| = 5 \times 1 - 3 \times 11 = 5 - 33 = -28
A_y = \begin{pmatrix} 2 & 5 \\ 4 & 11 \end{pmatrix}
|A_y| = 2 \times 11 - 5 \times 4 = 22 - 20 = 2
এখন, ক্র্যামের নিয়ম অনুযায়ী,
x = \frac{|A_x|}{|A|} = \frac{-28}{-10} = 2.8
y = \frac{|A_y|}{|A|} = \frac{2}{-10} = -0.2
অতএব, সমাধান হলো x = 2.8 এবং y = -0.2।
যদি একটি ত্রিভুজাকার ম্যাট্রিক্স দেওয়া থাকে যেমন:
A = \begin{pmatrix} 3 & 0 & 0 \\ 2 & 5 & 0 \\ 1 & -1 & 4 \end{pmatrix}
ত্রিভুজাকার ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক নির্ণয় করার জন্য শুধুমাত্র প্রধান কর্ণের উপাদানগুলোর গুণফল করতে হবে:
|A| = 3 \times 5 \times 4 = 60
ধরা যাক, একটি ম্যাট্রিক্স A দেওয়া আছে:
A = \begin{pmatrix} 2 & -1 \\ 3 & 4 \end{pmatrix}
আমরা জানি যে |A^T| = |A|, সুতরাং প্রথমে |A| নির্ণয় করি:
|A| = 2 \times 4 - (-1) \times 3 = 8 + 3 = 11
তাহলে |A^T| = 11।
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায় যে নির্ণায়কের ধর্মাবলী ব্যবহার করে ম্যাট্রিক্স সম্পর্কিত বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা সহজ হয়ে যায়।
ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক নির্ণয়ের জন্য অনুরাশি (Minor) ও সহগুণক (Cofactor) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনুরাশি ও সহগুণক ম্যাট্রিক্সের উপাদানগুলোর উপর ভিত্তি করে নির্ণায়ক নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
নিচে অনুরাশি ও সহগুণকের সংজ্ঞা এবং তাদের ব্যবহারের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:
কোনো n \times n ম্যাট্রিক্সের একটি নির্দিষ্ট উপাদানের অনুরাশি বলতে বোঝায় ওই উপাদানটি বাদ দিলে বাকি উপাদানগুলো দিয়ে গঠিত (n-1) \times (n-1) আকারের ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক।
উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক একটি 3 \times 3 ম্যাট্রিক্স A রয়েছে:
A = \begin{pmatrix} a_{11} & a_{12} & a_{13} \\ a_{21} & a_{22} & a_{23} \\ a_{31} & a_{32} & a_{33} \end{pmatrix}
এখন, a_{11} এর অনুরাশি বের করতে হলে প্রথম সারি ও প্রথম কলাম বাদ দিয়ে (n-1) \times (n-1) ম্যাট্রিক্সটি নিতে হবে, অর্থাৎ:
\text{Minor of } a_{11} = M_{11} = \begin{vmatrix} a_{22} & a_{23} \\ a_{32} & a_{33} \end{vmatrix}
এভাবে প্রতিটি উপাদানের জন্য তার অনুরাশি নির্ণয় করা যায়।
সহগুণক হলো কোনো নির্দিষ্ট উপাদানের অনুরাশির সাথে একটি চিহ্ন সংযুক্ত মান। একটি a_{ij} উপাদানের সহগুণক C_{ij} নির্ণয় করা হয় এভাবে:
C_{ij} = (-1)^{i+j} \cdot M_{ij}
এখানে M_{ij} হলো a_{ij} উপাদানের অনুরাশি এবং (-1)^{i+j} চিহ্ন নির্ধারণ করে। যদি i + j জোড় সংখ্যা হয় তবে এটি ধনাত্মক থাকে, আর যদি বিজোড় সংখ্যা হয় তবে এটি ঋণাত্মক হয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি a_{11}-এর অনুরাশি M_{11} হয়, তবে সহগুণক C_{11} হবে:
C_{11} = (-1)^{1+1} \cdot M_{11} = 1 \cdot M_{11} = M_{11}
আর a_{12}-এর জন্য,
C_{12} = (-1)^{1+2} \cdot M_{12} = -M_{12}
ধরা যাক, একটি 3 \times 3 ম্যাট্রিক্স A রয়েছে:
A = \begin{pmatrix} 2 & 3 & 1 \\ 4 & 5 & 6 \\ 7 & 8 & 9 \end{pmatrix}
আমরা a_{11}, a_{12}, এবং a_{13}-এর জন্য অনুরাশি ও সহগুণক নির্ণয় করব।
একটি 3 \times 3 ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক বের করতে হলে প্রথম সারির উপাদানগুলো এবং তাদের সহগুণক ব্যবহার করা হয়:
|A| = a_{11} \cdot C_{11} + a_{12} \cdot C_{12} + a_{13} \cdot C_{13}
উপরের উদাহরণ অনুযায়ী,
|A| = 2 \cdot (-3) + 3 \cdot 6 + 1 \cdot (-3)
= -6 + 18 - 3 = 9
এভাবেই অনুরাশি ও সহগুণক ব্যবহার করে ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক নির্ণয় করা যায়।
নির্ণায়কের মান নির্ণয় ম্যাট্রিক্স অ্যালজেব্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নির্ণায়ক নির্ণয় করতে হলে সাধারণত কিছু ধাপ ও নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। এখানে বিভিন্ন আকারের ম্যাট্রিক্সের জন্য নির্ণায়ক নির্ণয়ের পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে।
যদি A একটি 2 \times 2 ম্যাট্রিক্স হয়:
A = \begin{pmatrix} a & b \\ c & d \end{pmatrix}
তাহলে নির্ণায়ক |A| নির্ণয়ের নিয়ম হলো:
|A| = ad - bc
উদাহরণ:
যদি
A = \begin{pmatrix} 3 & 4 \\ 2 & 5 \end{pmatrix}
তাহলে,
|A| = (3 \times 5) - (4 \times 2) = 15 - 8 = 7
একটি 3 \times 3 ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়ক বের করতে হলে অনুরাশি এবং সহগুণক ব্যবহার করতে হয়। যদি
A = \begin{pmatrix} a_{11} & a_{12} & a_{13} \\ a_{21} & a_{22} & a_{23} \\ a_{31} & a_{32} & a_{33} \end{pmatrix}
তাহলে নির্ণায়ক |A| বের করার নিয়ম হলো:
|A| = a_{11}(a_{22}a_{33} - a_{23}a_{32}) - a_{12}(a_{21}a_{33} - a_{23}a_{31}) + a_{13}(a_{21}a_{32} - a_{22}a_{31})
উদাহরণ:
যদি
A = \begin{pmatrix} 1 & 2 & 3 \\ 4 & 5 & 6 \\ 7 & 8 & 9 \end{pmatrix}
তাহলে,
|A| = 1 \times (5 \times 9 - 6 \times 8) - 2 \times (4 \times 9 - 6 \times 7) + 3 \times (4 \times 8 - 5 \times 7)
= 1 \times (45 - 48) - 2 \times (36 - 42) + 3 \times (32 - 35)
= 1 \times -3 - 2 \times -6 + 3 \times -3
= -3 + 12 - 9 = 0
তাহলে, |A| = 0, অর্থাৎ এই ম্যাট্রিক্সটি সিংগুলার।
উচ্চতর অর্ডারের ম্যাট্রিক্সের জন্য নির্ণায়ক নির্ণয় করতে ল্যাপ্লেস এক্সপানশন বা কোফ্যাক্টর এক্সপানশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটি একাধিক স্তরের অনুরাশি ও সহগুণক ব্যবহার করে বের করা হয়।
একটি n \times n ম্যাট্রিক্সের ক্ষেত্রে প্রথম সারি বা কলাম ধরে কোফ্যাক্টর এক্সপানশন করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি A একটি 4 \times 4 ম্যাট্রিক্স হয়, তবে প্রথম সারির জন্য ল্যাপ্লেস এক্সপানশনের নিয়ম প্রয়োগ করা যায়:
|A| = a_{11}C_{11} + a_{12}C_{12} + a_{13}C_{13} + a_{14}C_{14}
এখানে, C_{ij} হলো সহগুণক।
যদি ম্যাট্রিক্সটি ত্রিভুজাকার হয় (উপরের ত্রিভুজাকার বা নিচের ত্রিভুজাকার), তবে তার নির্ণায়ক বের করতে শুধু প্রধান কর্ণের উপাদানগুলো গুণ করলেই হয়।
ধরা যাক,
A = \begin{pmatrix} 3 & 0 & 0 \\ 2 & 5 & 0 \\ 1 & -1 & 4 \end{pmatrix}
এটি একটি নিচের ত্রিভুজাকার ম্যাট্রিক্স, তাই এর নির্ণায়ক হবে:
|A| = 3 \times 5 \times 4 = 60
নির্ণায়ক নির্ণয় বিভিন্ন আকারের ম্যাট্রিক্সের জন্য ভিন্ন হতে পারে। ছোট আকারের জন্য সহজ সরল গাণিতিক প্রক্রিয়া এবং বড় আকারের জন্য অনুরাশি ও সহগুণক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
১. নির্ণায়ক শূন্য না হওয়া:
একটি বর্গম্যট্রিক্সের বিপরীত থাকতে হলে এর নির্ণায়ক শূন্য হওয়া যাবে না। অর্থাৎ, যদি হয়, তাহলে -এর কোনো বিপরীত ম্যাট্রিক্স থাকবে না, এবং তাকে সিংগুলার (Singular) ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
২. বিপরীত ম্যাট্রিক্সের বৈশিষ্ট্য:
এবং ।
একটি ম্যাট্রিক্সের বিপরীত নির্ণয়ের জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়:
বিপরীত ম্যাট্রিক্স নির্ণয়:
নির্ণায়ক শূন্য নয় এমন ম্যাট্রিক্সের জন্য বিপরীত ম্যাট্রিক্স বের করা যায়:
এখানে হলো -এর নির্ণায়ক এবং হলো অ্যাডজয়েন্ট ম্যাট্রিক্স।
উদাহরণ:
ধরা যাক,
প্রতিটি উপাদানের জন্য অনুরাশি বের করে এবং সহগুণক চিহ্ন প্রয়োগ করে, আমরা পাই:
সহগুণক ম্যাট্রিক্সের ট্রান্সপোজ নিলে পাই:
ধরা যাক, আমাদের কাছে নিচের দুটি একঘাত সমীকরণ রয়েছে:
আমরা এই সমীকরণগুলোকে জোট আকারে প্রকাশ করতে পারি, যাতে সমাধান করা সহজ হয়।
উপরের সমীকরণগুলোকে আমরা আকারে লিখতে পারি, যেখানে:
তাহলে সমীকরণটি হবে:
আমাদের সমীকরণটি আকারে, এবং -এর সমাধান পেতে হলে আকারে পুনর্লিখন করতে হবে। এজন্য প্রথমে -এর বিপরীত ম্যাট্রিক্স নির্ণয় করতে হবে।
যেহেতু , তাই -এর একটি বিপরীত ম্যাট্রিক্স রয়েছে।
প্রতিটি উপাদানের সহগুণক নির্ণয় করে এবং অ্যাডজয়েন্ট ম্যাট্রিক্সের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়:
এর জন্য অ্যাডজয়েন্ট ম্যাট্রিক্স হলো:
তাহলে,
এখন ব্যবহার করে -এর মান নির্ণয় করা যাক:
গুণফল নির্ণয় করে পাই:
অতএব, সমীকরণ সিস্টেমের সমাধান হলো:
এইভাবে, বিপরীত ম্যাট্রিক্সের সাহায্যে একঘাত সমীকরণের সমাধান করা যায়।
ক্রেমারের নিয়ম (Cramer's Rule) হল একঘাত সমীকরণ জোট সমাধানের একটি পদ্ধতি, যা ম্যাট্রিক্স নির্ণায়ক ব্যবহার করে সমীকরণের প্রতিটি অজ্ঞাত রাশি নির্ণয় করে। ক্রেমারের নিয়ম কেবল তখনই ব্যবহার করা যায় যখন সমীকরণগুলোর সংখ্যা এবং অজ্ঞাত রাশির সংখ্যা সমান হয় এবং সমীকরণ জোটের নির্ণায়ক শূন্য না হয়।
ধরা যাক, আমাদের কাছে দুটি একঘাত সমীকরণ রয়েছে:
2x + 3y = 5
4x + y = 11
আমরা ক্রেমারের নিয়ম ব্যবহার করে এই সমীকরণগুলোর সমাধান বের করব।
প্রথমে আমরা কফিশিয়েন্ট ম্যাট্রিক্স A তৈরি করি এবং এর নির্ণায়ক |A| নির্ণয় করি।
A = \begin{pmatrix} 2 & 3 \\ 4 & 1 \end{pmatrix}
|A| = (2 \times 1) - (3 \times 4) = 2 - 12 = -10
যেহেতু |A| \neq 0, তাই ক্রেমারের নিয়ম প্রয়োগ করা সম্ভব।
A_x হলো সেই ম্যাট্রিক্স যা কফিশিয়েন্ট ম্যাট্রিক্স A-এর প্রথম কলামটি B ভেক্টর দিয়ে প্রতিস্থাপন করে গঠিত হয়।
A_x = \begin{pmatrix} 5 & 3 \\ 11 & 1 \end{pmatrix}
|A_x| = (5 \times 1) - (3 \times 11) = 5 - 33 = -28
A_y হলো সেই ম্যাট্রিক্স যা কফিশিয়েন্ট ম্যাট্রিক্স A-এর দ্বিতীয় কলামটি B ভেক্টর দিয়ে প্রতিস্থাপন করে গঠিত হয়।
A_y = \begin{pmatrix} 2 & 5 \\ 4 & 11 \end{pmatrix}
|A_y| = (2 \times 11) - (5 \times 4) = 22 - 20 = 2
ক্রেমারের নিয়ম অনুযায়ী,
x = \frac{|A_x|}{|A|} = \frac{-28}{-10} = 2.8
y = \frac{|A_y|}{|A|} = \frac{2}{-10} = -0.2
অতএব, সমীকরণ জোটের সমাধান হলো:
x = 2.8, \quad y = -0.2
এইভাবে, ক্রেমারের নিয়ম ব্যবহার করে একঘাত সমীকরণের সমাধান করা যায়।
Read more